মধুমিতা নাথ
বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৯
দীঘল বাঁকের উপাখ্যান ---- ৭
------------------------------------------
নোটন নোটন পায়রাগুলি
ঝুটন যে আর বাঁধছে না
নদীর পারে ছেলেমেয়ে
নাইতে বুঝি নামছে না !
লাগামছাড়া , শূন্যে উড়া
বেহুঁশ কবুতরের ছা'
ভুলছে মাটি , ক্ষুদের বাটি
রোদ ছড়ানো উঠোনটা
নদীর পারে ঝোপের আড়ে
প্লাস্টিক ব্যাগ , জমছে স্তুপ
শুকনো নদী সমবৎসর
ভর শ্রাবনে করাল রূপ
সাঁতার-স্কুলের ছেলেমেয়ে
দীঘির জলে ভিড় করে
স্নান সেরে নেয় কলের নিচে
বালতি মগে স্নানঘরে
সবাই দেখে , কেউ বুঝে না
নোটন নোটন বোলের তাল
ঝুটন বাঁধার পায়রাগুলি
দিক ভুলে সব বেসামাল
দাদার হাতে কলম ছিল
লেখতে আখর যোগান নাই
তাইতো কলম ছুঁড়ছে দাদা
উফঃ লেগেছে ! বড্ড তাই
হেই দাদা তুই ছুঁড়িস না আর,
লিখ কবিতা , কলম ধর
বাঁধতে ঝুটন নোটন নোটন
সব কবুতর জড়ো কর
--------------------------------
©মধুমিতা নাথ
19/06/2019
দীঘলবাঁকের উপাখ্যান ---৬
---------------------------------------
উষ্ণ আবাস,শুকনো বাতাস গ্রীষ্ম যখন বারো মাস
খুব যে গরম,বাজার চরম,পুড়ছে মাটি নরম ঘাস
অতীত পাতায় পাওনি বুঝি এমনধারা গরম স্রোত !
যেদিন গেছে সুদিন গেছে ! মনভুলানো মিথ্যে স্তোক
বীজ বুনেছে ভাগের কৃষক,ধার করা সার,সেচের জল
প্রত্যাশা তার ষোল আনা , দু'আনা নেই হাড়ের বল
কালচে মাটি , বন্ধ্যা জমি দাবানলের চড়কি নাচ
গলায় দড়ি দিচ্ছে চাষী,ছড়িয়ে দিয়ে আগুন আঁচ
কলুর বলদ ছুটছে যারা,সামনে বুঝি দিগন্ত !
জ্বলন্ত এক আগুনপিন্ড , সূর্য তবু নিভন্ত
কলম হাতে ছুটছে কবি,লিখছে প্রেমের কাব্য-শ্লোক
কিশোরবেলার ছাইচাপা গান , অভিমানের বন্য শোক
হেই কবি তোর কলম থামা
ছিটিয়ে কালি বর্ষা নামা
পারিস যদি করিস ঝামা
পুড়িয়ে গায়ের ছেঁড়া জামা
বুকের ভেতর নেই ফাগুন
অশ্রু কোথায় ? সব আগুন
অপেক্ষমান হাজার চোখ
তোর কলমেই শ্রাবণ হোক
©মধুমিতা নাথ
14/06/2019
দীঘলবাঁকের উপাখ্যান --- ৫
----------------------------------------
হৃদয়বাবুকে কোথায় পাওয়া যাবে ?
খুব প্রয়োজন , কথা আছে তার সঙ্গে
বুকের বাঁ দিকে অতিপাতি খুঁজে পাওয়া গেল রক্ত সঞ্চালন কারখানা , অনেক অলিগলি বারান্দা ঘুলঘুলি অফিস ঘর যন্ত্রপাতি , হৃদয়বাবু ওখানে আদৌ বসেন কিনা কে জানে!
সঠিক ঠিকানা মিলল না
কিন্তু ভীষণ প্রয়োজন , কথা আছে তার সঙ্গে
আনুমানিক হদিস --- মস্তিষ্ক ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিলে পাওয়া যেতে পারে হয়তো
এ যে আরেক জটিল হ্যাপা !
এত এত সরু গলি , চোরা কুঠুরী
এদিক ওদিক চারাগাছ , ভাঙা টব , ছড়ানো ছিটানো মাটি , অসংখ্য বীজ ছড়িয়ে আছে ...
এখানে কি চাষ হয় ! না কি হৃদয়বাবুর বাগান করার শখ আছে !
সূক্ষ্ম তারজালি আর অস্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালের ওপাশটায় ধোঁয়াটে
কেউ একজন ডেস্কটপে স্থির , উদাসীন
তিনিই কি হৃদয়বাবু ?
কিন্তু ঐ প্রকোষ্ঠে প্রবেশ পথ কোনটা ?
দেখা করা ভীষণ প্রয়োজন , কথা আছে তার সঙ্গে
হ্যালো , শুনছেন ? এই যে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। অনেকদিন ধরে খুঁজছি আপনাকে , ভীষণ প্রয়োজন ...
আ মলো যা ! নিজের কথা নিজের কানে বাজে , কম্পিউটারাইজড ভয়েস !
কাঁচের ঘেরাটোপের বাইরে আমি
হরিদাস পাল অপেক্ষা করছি
আর থেকে থেকে চেঁচিয়ে যাচ্ছি কখন তিনি ফিরে দেখবেন আমাকে , কাছে ডাকবেন , কথা বলবেন
ভীষণ ভীষণ কিছু প্রয়োজনীয় কথা
---------------
মধুমিতা নাথ
02/06/2019
দীঘল বাঁকের উপাখ্যান ---- ৪
(একটি ঝড়ের পূর্বাভাস এবং ...)
----------------------------------------------
এখনো আড্ডা হয় ...
চায়ের টেবিলের ঝড় দিক পাল্টে সামাজিক মাধ্যমে এলোপাথাড়ি ছুটতে থাকলে
নিরাপদ আশ্রয়ে কাঁচের জানালায় চোখ রেখে কেউ কেউ ঝড়কে দেখে
কোনো এক টিনের চালা উড়ে যেতেও পারে ঘূর্ণির সাথে আপাতত ঠিকানা ছাড়া
ঝড় আসবে , পূর্বাভাস তাই বলে
চালার কাঠামোতে মজবুতি যাচাইয়ের চোখ ফেরে সংশয়ে
এইবার টিঁকে গেলে সামনের বোশেখে দুটো একটা নতুন টিন , হয়ে যেতেও পারে
কাঁচের শার্সি ঝকঝকে হয়ে উঠে ঝড় দেখার প্রত্যাশায়
ঝড় খুব সাহসী হয় , বাহবা কুড়োয় নিরাপদ জানালার
আচ্ছা , ঝড় কি কাঁচের জানালা গুঁড়িয়ে দেয়?
দীঘলবাঁকের উপাখ্যান ---- ৩ (গর্ভধারিণী)
------------------------------------------------------------
একটি সুড়ঙ্গ যেখানে শুরু সেখানে তোমার তর্জনী বিচ্ছিন্ন হলো আমার মুঠো থেকে
তোমার চোখের পাতা ঢেকেছিলে সমুদ্র-কান্না
আমি বোবা-কালা-অন্ধ আজন্ম পঙ্গু , ঘুমের ঘোরে খুঁজি কমলকলির ঘ্রাণ , সমস্ত উপত্যকা জুড়ে জাদুকলিজা সুর ,
সহজপাঠ ধারাপাত পার করে পঙ্খীরাজ ঘোড়া ছুটে অলীকের খোঁজে ,
আমি কি আর ডালিমকুমার !
বৃক্ষহীন তেপান্তরে হারিয়েছে পথ কতবার
ভুলেছি জাদুমন্ত্র বহুকাল আগে শিখেছি যা
ভেবেছি আগুন চিবিয়ে খাব , ঝলসে গেছে মুখ ,
তবুও মৃত্যু নেই আমার !
তোমার ছেঁড়া আঁচলে অবুঝ শৈশবটুকু তোলা তাই আজও অমাবস্যায় , ঝড়-জল ভেঙে আসা হঠাৎ আলোয় আমার পঙ্গুত্ব ফুঁড়ে বেরিয়ে আসি নগ্ন আমি
ঐশ্বরিয় আভা মজ্জায় , মননে । আমিই সেই আলাদীন , আশ্চর্য প্রদীপে অধিকার যার ,
আলোক স্নানের পর গভীর সেই মন্ত্র উচ্চারণে, ধ্বনি থেকে প্রতিধ্বনি --- খুল যা সিম সিম ...
রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯
দীঘলবাঁকের উপাখ্যান --- ২
মধুমিতা নাথ
একটা কবিতা লিখব বলে রাতদিন অক্ষর জড়ো করি ,
অক্ষর ভেঙে মহাশূন্যে জোড়াতালি অক্ষর-প্রাসাদ গড়ি
খাঁজে খাঁজে গুঁজে দিই কসমেটিক প্রলেপের রঙিন বর্ণমালা
বৃক্ষের ছাল ছাড়িয়ে দেখি অন্দরে কতটা সবুজ এখনো লুকোনো সঞ্চয়
সারি সারি পসরার ভিড় ঘেঁটে তুলে আনি দুর্লভ পারিজাত ,
ম্রিয়মান স্বর্গীয় আভা মেখে কবি নামধারী আমি আদতে আনাড়ি
কিনেছি জলের দরে আক্রোশ তার ,মায়ের শুকনো স্তন চুষে যে উলঙ্গ শিশু আধো ঘুম আধো জাগরণে কঁকিয়ে ওঠে,শীর্ণ দীর্ণ মায়ের চুপ চুপ স্বর --- সো যা বেটা,নাহি তো গব্বর আ যায়গা ...
মিথ ঘেঁটে তুলে আনি ইভ-সত্তার ফুলঝুরি উপকথা,পথে যেতে লিলিথের গুণমুগ্ধ আমি কবিতা ভুলে ডাইনির প্রেমে মজে থাকি
অক্ষরে অক্ষরে ঠোকাঠুকি , ফুলকি ঝরে কোনো ভাবী প্রমিথিউসের প্রত্যাশায়
বহুদিন , বহুকাল অপেক্ষা তোমার জন্য হে পরাক্রম , তোমার তেজদীপ্ত মহিমায়
অপরিণামদর্শী জ্ঞানে করে দিও ক্ষমা
পরিপূর্ণ হোক আসন নবরত্ন সভার
এ জন্মে কবি হওয়া হলো না আমার
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)